বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ।টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশকে আরো অনেক দূর এগুতে হবে। পারি দিতে হবে পিচ্ছিল পথ। এশীয় অঞ্চলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে নেপাল ও ভুটান। জাতি সংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের হিসেবে বাংলাদেশেরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তবে মানব সম্পদ সূচকের সামান্য উন্নতি করতে পারলে এলডিসি থেকে সহজে বের হয়ে আসতে পারবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য বলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশই কৃষি খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হতে পারেনি। তাই আমাদের পক্ষেও কৃষিতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ছাড়া এলডিসির তালিকা থেকে বের হওয়া ও টেকসই উন্নয়ণ লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এ জন্য গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কৃষি পণ্যের যথাযথ বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’ সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্ট- আঙ্কটাডের এলডিসি রিপোর্ট-২০১৫ উপস্থাপন উপলক্ষে সিপিডি আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। এ বছর প্রতিবেদনে গ্রামীণ অর্থনীতি রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এলডিসি থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে নেপাল ও ভুটান ইতোমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে । আগামী ছয় বছর তারা পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকবে। আর আমাদের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে এ বিবেচনার মধ্যে থাকার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে আমাদের এলডিসি থেকে বের হতে হলে উত্তরণকালীন পকিল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যেন গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করে গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়ন করা যায়। এক্ষেত্রে কৃষি খাতের উন্নয়নে কৃষি পণ্য গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে আসা সহজ করতে হবে। কৃষি পণ্য রপ্তানি সহজ করতে হবে। কৃষির সাথে শিল্পের সংযুক্তি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মানব সম্পদ উন্নয়নের পদক্ষেপ থাকলেও বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। অর্থনীতিবিদগণ বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে যাবে বলে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা যা বলছেন, তা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। মধ্য মধ্যম আয়ের দেশ বলে কোনো শ্রেণি বিভাগ নেই। আর উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছতে হলে আমাদের মাথা পিছু আয় অন্তত চারগুণ বাড়িয়ে ৪ হাজার ১২৫ ডলার করতে হবে, যা এই সময়ের মধ্যে অবাস্তব। কেউ কেউ বলেন, এলডিসির তালিকা থেকে বের হতে হলে আয় বৃদ্ধির সূচক, মানব উন্নয়ন সূচক এবং ভঙ্গুরতা সূচকের যে কোনো দু’টি সূচকে লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। আয় সূচকের ক্ষেত্রে তিন বছরে অর্থাত ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে গড় আয় হতে হবে ১ হাজার ২৪২ ডলার, যা বর্তমানে আছে ৯২৬ ডলার। মানব উন্নয়ন সূচক হতে হবে ৬৬ পয়েন্টের বেশি। যেখানে বর্তমানে আছে ৬৩ দশমিক ৮ পয়েন্ট। শুধু ভঙ্গুরতা সূচকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। সুতরাং এলডিসি থেকে বের হতে হলে মানব উন্নয়নে নজর বাড়াতে হবে। তবে ২০১৮ সালের মধ্যে দু’টি সূচকে লক্ষ্য অর্জন করতে পারলেও এরপর দুই দফায় তিন বছর করে ৬ বছরে বাংলাদেশকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। অর্থাৎ ২০২৪ সালের আগে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আঙ্কটাডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত ৪৮ টি দেশের মধ্যে কৃষি জমির উৎপাদনশীলতা বা ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু জমি ও জন শক্তির হিসেবে আবার সর্বনি¤œ অবস্থানে। শিল্পে কর্মসংস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। প্রকৃত অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের দিক থেকে ৪৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। প্রকৃত দেশজ উৎপাদ বৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম। তাই এই কৃষি ভিত্তিক কার্যক্রম সাধারন মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে নেয়ার উদ্দেশ্যে লাহারকান্দি ইউনিয়ন তৈরি হয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়।
কৃষি অফিস সম্পর্কিত তথ্য জানতে এখানে ক্লিক করুন
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস